৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

বিতর্ক, তবুও বরিশালে বাণিজ্য মেলা শুরু!

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

অবশেষে বিতর্ক টপকে বরিশালে বাণিজ্য মেলা শুরু করলো উদ্যোক্তারা। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশাল জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কোন কর্তা-ব্যক্তি এমনকি সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও অনপুস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে- লোকসমাগমের স্থান ভেদ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাণিজ্য মেলা অনুরুপ একটি স্পট হওয়ায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেছেন। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- ‘দি বরিশাল চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাট্রি’ নেতৃবৃন্দ এই বাণিজ্য মেলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না !

একাধিক সূত্র জানায়- বেশ কিছুদিন ধরে শহরের বান্দরোডস্থ বিআইডব্লিউটিএ’র মাঠে বাণিজ্য মেলা আয়োজন নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দেখা দেয়। বিশ্বব্যাপি নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে প্রধান উৎসমুল হচ্ছে লোকসমাগমের স্পট হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে সতর্কতাস্বরুপ লোকসমাগম এড়িয়ে স্বয়ং প্রধান শেখ হাসিনা সতর্ক করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ আয়োজনও বাতিল করে দেন। রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই অনুষ্ঠানে লোকসমাগমের কথা বিবেচনা করেই রাষ্ট্রীয় এই অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ায় প্রধান অতিথি ভারতের প্রধান নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর বাতিল করেন। এমতাবস্থায় বরিশালে স্থানীয় সুশীল সমাজসহ দায়িত্বশীল নানা মহল বাণিজ্য মেলা বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেন।

খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- বরিশালের একজন আওয়ামী লীগ নেতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই মেলার অনুমোদন লাভ করেন। নিয়ম অনুসারে জেলা চেম্বার অব কমার্স’র প্যাডে এক্ষেত্রে আবেদন করার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে অপর একটি সুত্র বলছে- চেম্বার অব কমার্সের নতুন একজন নেতা এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখায় বাণিজ্যিক এই সংগঠনের অপরাপর নেতাদের মুখ বন্ধ করে দেয়। অনুমোদন লাভের পর ঢাকার জনৈক বাপ্পি নামক এক যুবকের কাছে মেলাটি লিজস্বরুপ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে- মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে বাপ্পি বাণিজ্য মেলার মাঠ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এখানে কৌশল হচ্ছে বিতর্ক এড়াতে অনুমোদন নিয়ে আসা ওই আওয়ামী লীগ নেতা এবং পরামর্শদাতারা পর্দার অন্তরালে থাকছেন।

শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়- মেলায় অন্তত ১০০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাবরই বাণিজ্য মেলায় মানুষের ভিড়ে থাকা ঠাসা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হয় জমকালো। কিন্তু এবার সাদামাঠাভাবে অনেকটা প্রচারবিহীন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কোনভাবে সম্পন্ন করতে দেখা যায়। ওই অনুষ্ঠানে বরিশাল প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কোন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেননি। ইতিপুর্বে মেলাসমুহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি মেয়রের ভুমিকা থাকে অগ্রগণ্য। এ সকল নেতৃবৃন্দ কেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসলেন না, এ বিষয়ে সিটি মেয়র ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মন্তব্য না পাওয়া গেলেও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ায় পর বিস্মিত হন। তার ভাষায়- করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমান সময়ে গোটা প্রশাসন সতর্কতারসহিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং লোকসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বাণিজ্য মেলা চালু একেবারেই বেমানান। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে বরিশালের সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসাবিধরা একই মন্তব্য করে বাণিজ্য মেলা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আপত্তি তুলেছেন। সুশীল সমাজও এ বিষয়ে বিরোধী অবস্থান নিয়ে মেলা বন্ধ বা স্থগিত করতে মতামত রেখে আসছিলেন।

অপর একটি সূত্র জানায়- চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্বে আসা প্রভাবশালী একজন নেতা বাণিজ্য মেলা শুরু করতে ঢাকার বাপ্পিকে উৎসাহিত করেন। ইতমধ্যে বাপ্পিও চাপের মধ্যে ছিলেন স্টল মালিকদের। মোটা অংকের টাকা দিয়ে স্টল বরাদ্দ এবং পণ্যসামগ্রী দিয়ে পসরা বসানো হলেও মেলা শুরু নিয়ে কালক্ষেপন করায় তারা একপ্রকার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং স্টল বরাদ্দের অর্থ ফেরত চাইতে থাকেন। যুবক বাপ্পি ওই নেতার বলে বলিয়ান হয়ে শুক্রবার বাদ জুমা দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে মেলার পর্দা উন্মোচন করেন। গুটি কয়েক অতিথি যারা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় এ ধরনের ব্যক্তিদের ওই দোয়া-মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা গেছে। সেখানে কয়েকজন মিডিয়াকর্মীকেও আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। মুলত মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতেই সংবাদকর্মীদের এই অংশটিকে ম্যানেজ করা হয়েছে। বরিশালে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন হলো অথচ কেউ জানলো না- এ বিষয় সম্পর্কে মেলা পরিচলনাকারী বাপ্পির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসলে এখনও উদ্বোধন হয়নি। সবে পরীক্ষামূলক মেলা চালু করা হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মাঝে কেন এই মেলার আয়োজন সে প্রসঙ্গে বাপ্পির ব্যাখ্যা দিতে এই প্রতিবেদককে মেলার মাঠে আসতে জোর অনুরোধ রাখেন। তার কথা-বার্তায় আভাস পাওয়া যায়- মেলা নিয়ে বিতর্ক চলমান থাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি জমকালো না করে ভিন্ন কৌশল অর্থাৎ অনেকটা গোপনে আয়োজন শুরু করলেন। মেয়র ও জেলা প্রশাসকসহ মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এ বিষয়ে তা অবগত কী না সেই প্রশ্নের উত্তরে বাপ্পি স্বীকার করেছেন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বা বিতর্ক সৃষ্টির কারণে দায়িত্বশীল এসকল কর্মকর্তারা মেলা শুরুতে সায় দিলেও উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেভাগেই অপারগতা জানিয়েছেন।

এদিকে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের মন্তব্যের সাথে অভিন্ন মত পোষণ করেন। কিন্তু তার মধ্যে তার যে ক্ষোভ রয়েছে তা অনুমান করা গেছে।

বাণিজ্যিক এই সংগঠনের একটি সূত্র জানায়- সাইদুর রহমান রিন্টু সভাপতি হলেও নতুন এক নেতার কারণে তিনি এখন কাঠের পুতুল মাত্র। সেই সুযোগটি লুফে নিয়েছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ। চেম্বার অব কমার্সের নতুন ওই প্রভাবশালী নেতা ক্ষমতাসীন দলের এই অংশটির মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করেছেন। যে কারণে বাপ্পি শত বিতর্ক উপেক্ষা করে মেলা শুরুর আয়োজনের সাহস নিয়েছেন। বরিশাল রাজনীতির এই প্রভাবে উপেক্ষিত হলো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ-পরামর্শও, যা আসলেই বিস্ময়কর।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network