২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

অলিম্পিক স্থগিত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপকহারে জীবনহানির পাশাপাশি বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি সারা বিশ্ব। ইতিমধ্যেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ব সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার মুখোমুখি।

করোনার কারণে স্থগিত হয়ে গেছে সারা বিশ্বের সমস্ত ক্রীড়া আসর। টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের আসরও স্থগিত করা হয়ে গেছে এক বছরের জন্য। যদিও আয়োজক জাপান এবং ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছেন, যেন অলিম্পিক স্থগিত করা না হয়।

কিন্তু করোনা মহামারির ছোবলের কারণে শেষ পর্যন্ত স্থগিত না করেও কোনো উপায় ছিল না। আধুনিক অলিম্পিকের ১২৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অলিম্পিক গেমস স্থগিত করার ইতিহাস তৈরি হলো। তবে কেন জাপান এবং আইওসি স্থগিতের পক্ষে ছিল না, তা ক্ষতির পরিমাণ দেখলেই অনুমান করা সম্ভব।

কানসাই ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ইমিরিটাস অধ্যাপক কাতসুহিরো মিয়ামোতো, যিনি আবার অলিম্পিকের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে নিয়মিত গবেষণা ও অধ্যাপনা করে থাকেন- তিনি গবেষণা করে অলিম্পিক এক বছর স্থগিত হওয়ার অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বের করেছেন।

ইমিরিটাস অধ্যাপক মিয়ামোতো গবেষণা করে বের করেছেন, অলিম্পিক বাতিল নয়, মাত্র এক বছর পিছিয়ে দেয়ার কারণে শুধুমাত্র আয়োজক জাপানেরই ক্ষতি হয়েছে ৬৪১ বিলিয়ন ইয়েন তথা ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি (৫০ হাজার ৯৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮০০০০) টাকা।

এটা শুধু আয়োজক জাপানের ক্ষতি। কিন্তু অলিম্পিক তো শুধুমাত্র আয়োজক কর্তৃপক্ষে মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অলিম্পিককে ঘিরে সারা বিশ্বেরই নানা কর্মকান্ড এবং আয়োজন চলে। এছাড়া আয়োজক দেশ জাপানেও অলিম্পিককে ঘিরে স্বাগতিক জাপানিদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং নানা ধরনের আয়োজনের কমতি ছিল না।

এ ক্ষেত্রে ছোট ব্যবসায়ী, হোটেলের প্রস্তুতি এবং প্রো-বেজবল টিমের ব্যায়সহ অলিম্পিককে ঘিরে সব কর্মকান্ডের হিসাব ধরলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমান প্রায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি (১ লাখ ১ হাজার ৯২৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬০০০০) টাকা।

অধ্যাপক মিয়ামোতো আয়োজকের নিট ক্ষতির পরিমাণ হিসেব বের করেছেন ৪২৩ বিলিয়ন ইয়েন (জাপানি মুদ্রা)। এর মধ্যে রয়েছে যেমন, ভেন্যু মেইন্টেনেন্স, ভিলেজ মেইন্টেনেন্স, মার্কেন্টিং ম্যাটেরিয়ালস রিপেয়ারিং এবং নতুন ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) দল খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ব্যাায়ের এই পরিমাণ ধরা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রধান বলেও দিয়েছেন, ‘অলিম্পিক পেছানোর অর্থ হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সবাইকেই অতিরিক্ত ব্যায়ের অংশীদার হতে হবে।’

একটি উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে এ ক্ষেত্রে। দ্য গ্রাফস্টোন কোম্পানি লিমিটেড, যারা এক বছর সময় ব্যায় করে কলার মত করে ডিজাইনের কেক তৈরি করছিল এবং অলিম্পিকের জন্য পুরো ইনভেস্ট ঢেলে দিয়ে নাম দিয়েছে ‘টোকিও বানানা’, তখন এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার অর্থ, তাদের ইনভেস্টের পুরোটাই লস। এক বছর পর আবার নতুন করে ইনভেস্ট করতে হবে তাদের।

গ্রাফস্টোনের বিক্রিতে মন্দা দেখা দিতে শুরু কর গত ফেব্রুয়ারি থেকে। যখন, চীনে করোনাভাইরাস ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখনই তাদের বিক্রি পড়তে থাকে। এখন তাদের নিয়োগকৃত বিক্রেতারা বলছেন, ‘২০২০ এর লোগো দিয়ে তারা আর কেক বিক্রি করতে পারবে না।’

ইউকিকো অহনো নামের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কখনোই এভাবে বিক্রি পড়ে যেতে দেখিনি।’

জাপানি স্পন্সররাই গেমস আয়োজনের জন্য দিয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্পন্সরদের কাছ থেকে আসা অর্থের বাইরে। আবার জাপানি স্পন্সরদের সঙ্গে চুক্তি হলো এক বছরের। এখন আগামী বছর তথা এক বছর বিলম্বে অলিম্পিক শুরু হলে তাদের চুক্তি থাকবে, এরপর কি হবে?’

এক স্পন্সরের প্রতিনিধি এ নিয়ে বলছেন, ‘আমাদের এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা উচিৎ। নেগোশিয়েট করা উচিৎ, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, নাকি কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করে নতুন করে চুক্তি করা হবে।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
Website Design and Developed By Engineer BD Network